বৃদ্ধ মাছ বিক্রেতা। বাংলা ভুতের গল্প
মাছ বিক্রেতার প্রতিশোধ
আমি অয়ন। আমি সরকারি চাকরি করি। আমার বদলি হয় বরিশালে। সেখানে আমি একাই গিয়েছিলাম আমার প্রাইভেসি জন্যে। মেসের আর দুই তিনজন ছিল তারাও সিঙ্গেল রুম করে থাকতেন। যেহেতু সবাই চাকরিজীবী বাড়ি থেকে চলে আসার পর কয়েক দিন কেটে যায়। এরপর একদিন মেসে আমার বাজারের ডেট পড়ে। আমার রুটিন মত আমি বাজারের দিকে রওনা হলাম। বাজারে গিয়ে দেখলা এক বৃদ্ধ একটা কোনায় বসে আছে। তার কাছে আমি দেখলাম মোটামুটি বড় সাইজের ইলিশ। ইলিশ মাছ দেখে মনে মনে ভাবলাম কতদিন খাইনা দেখি যদি একটা নিতে পারি।
এই বলে আমি চাচাটার দিকে এগিয়ে গিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করলাম কি চাচা। ইলিশ কত করে দিচ্ছেন। উত্তরে চাচা বললেন স্যার 200 টাকা কেজি।চাচার কথা শুনে আমিতো বেবাচাকা খেয়ে যাই। আমার ভাবনা জাহে চাচা কি বলে 500 টাকার উপরে দাম আর চাচা 200 টাকা চাচ্ছে মনে হয় বোকা। একটু দামাদামি করে দেখি এই বলে আমি চাচাকে বলি। কি বলেন চাচা 100 টাকা করে দিয়েন, দিলে অনেক গুলো নিবো। উনি আমাকে হাসি ভরা মুখে তাকিয়ে বললেন স্যার আপনি দিনের প্রথম কাস্টমার 90 টাকা কইরা রাখমু।
আমি মনে মনে নিজেকে অনেক বড় ভাবতে থাকি। আর এদিক ওদিক তাকিয়ে চাচাকে পাঁচ কেজি মাছ মারতে বলি। এই ভেবে যে ফ্রিজে রেখে অনেক দিন খাওয়া যাবে আর দামটা একেবার এই সস্তা। অনেক বড় দাও মেরেছি আমি। আজকে চাচা মাছ মাপ ছিলেন। এমন সময় আমার ফোনে কল আসে। আমার ম্যাচমেট কল। আমি ফোন ধরতে সে আমাকে জিজ্ঞেস করল আমি মেইন দরজার চাবি নিয়ে এসেছে কিনা।আমি বললাম হ্যাঁ আমি চাবি নিয়ে এসেছি। সে তখন আমাকে জানালো যে সে ভুলে চাবি নিয়ে বের হইনি, তাই আমি যেন সন্ধ্যেবেলা তার সাথেই বাড়ি ফিরি। আমিও সম্মতি দিয়ে ফোন রেখে মাছওয়ালা চাচার দিকে তাকাই। কিন্তু আমি সেখানে মাছের ঝুরি আর মাছওয়ালা চাচাকে দেখতে পায়না বরং তার পাশে দেখতে পাই কয়েকজন যুবক মাছ বিক্রেতা।
একজন যুবক ইলিশ মাছ মাপছিল দাড়িপাল্লায়। আমি ওকে দেখে ভাবলাম যে চাচা হয়ত বাথরুমে বা অন্য কোথাও গেছে তাই এই যুবক মাছ বিক্রেতাকে মনে হয় মাছ মাপতে দিয়ে গেছেন। আমার ভাবনার শেষ হতেই মাছ বিক্রেতা আমার ব্যাগে মাছ ডেলে টাকা চাইলেন। আমি 5 কেজি 90 টাকা করে ধরে 450 টাকা দিলাম। কিন্তু সে 450 টাকা নিয়ে সে আমাকে বলল আর টাকা কই সাহেব। আমি বিরক্ত হয়ে বললাম কি বলছেন চাচা 90 টাকা কেজি করে বলেছিলেন সেই অনুযায়ী 450 টাকাই হয়। আমার কথা শুনে মাছ বিক্রেতা আমাকে বদ্ধ উন্মাদ ধরে বলতে লাগলো আপনি স্বপ্ন দেখতে ছিলেন 500 টাকা কইরা তো 2500 টাকা হয়। আপনি আমারে 450 টাকা দিয়ে যাচ্ছেন এইটা তো এক কেজির দামও না।
আমি ওনাকে এবার ধমক দিয়ে বলি আরে এখানে তো চাচা ছিলো উনি কোথায় যার সাথে দামোদর করেছিলাম তাকে ডাকেন। মাছ বিক্রেতা তখন অন্য মাছ বিক্রতাদের ডাকেন। তারা আমাকে এসে বললো স্যার এখানে কোন বুড়া চাচায় নাই আমরাই মাছ বেচি। আপনি একটু আগে এইখানে আইসা আমার শরীর পাশে দাঁড়ান আর নিজে নিজেই কি সব বলতে ছিলেন হঠাৎ কইরাই 5 কেজি মাছ মাপতে বলে ফোন হাতে সামনে আগায় গেলেন। আমি নিজের কান চোখে বিলিভ করতে পারছিলাম না। অগত্যা আমাকে 2500 টাকা দিয়েই 5 কেজি ইলিশ আনতে হল।
সেদিন আমি আর অফিস করিনি সারাদিনই মাছের কথা ভাবছিলাম।আর প্রচন্ড মাথা ব্যথায় ভুগছিলাম। সন্ধ্যার পরে সবাই ফিরে এসে দেখে আমি পাঁচ কেজি ইলিশ নিয়ে ফিরে এসেছি। এটা দেখে ওরা আমাকে বকাবকি করে কিছুটা। আমি মন খারাপ করে একটু জলদি সেদিন শুয়ে পড়ি আর ঘুমিয়ে পড়ি মাঝরাতে হঠাৎ আমার দরজায় কেউ নক করল কয়েকবার নাকের আওয়াজ শুনে আমার ঘুম ভাঙলো। আমি প্রচন্ড মাছের গন্ধ অনুভব করতে থাকি আর দরজার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করি কে কে বাইরে এত রাতে কি চাই তখন দরজার বাইরে থেকে আমি শুনতে পাই।
শুনে আমার গায়ের লোম দাঁড়িয়ে যায় আমি শুনতে পাই সেই বৃদ্ধ ছেলের কন্ঠে কেউ আমাকে বলছে শাহেব মাছ নিবেন না ইলিশ মাছ পাঁচ কেজি মাইরা রাখছি আপনার জন্য মাছ নিবেন না নিয়া জান। মাছ নিয়ে যান।
এই কথা শুনে আমি ভয়ে চিৎকার দিয়ে উঠলে আমার রুমে আবার নক হয়। আমি আমার কলিগের গলার আওয়াজ শুনে দরজা খুলতে যেতে যেতে আমি ভাবি যে আমি হয়তো ভুল শুনছিলাম ও যা ভাবছিলাম সেটা ভুল ভাবছিলাম। এরপর দরজা খুলতেই মনির ভেতরে এসে আমাকে বলে কি ব্যাপারে আয়ান ভাই চিল্লাচ্ছেন কেন আর আপনার রুমে এত বাজে মাছের গন্ধ কেন। মনিরের এই কথা শুনে আমি আকাশ থেকে পরী। আপনিও মাছের গন্ধ পাচ্ছেন তাহলে সমস্যাটা কি হল। আমি তো তাহলে ভুল শুনছি না। আমার সাথে কি হচ্ছে এসব।
মিজান আমাকে পানি খাইয়ে শান্ত করেন। আর আমার কথা শুনে বলেন যে সব আমার মনের ভুল। এরপর তারা আমার ঘর থেকে নিজ নিজ ঘরে চলে যান আমিও বিষয়টাকে মনের ভুল ভেবে আবার ঘুমানোর চেষ্টা করি যখন হালকা তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়ি তখনই আমার রুমের চারপাশ থেকে ফিসফিস প্রতিধ্বনি শুনতে পায় মাছ ইলিশ মাছ নেবেন না স্যার আপনাকে নিতেই হবে দাম করেছেন এখন না নিলে খারাপ হবে। মাছ নেবেন না স্যার ইলিশ মাছ। এমন হারে শব্দ টা হচ্ছিল যেন মনে হচ্ছিল আমি কোন হরর মুভির থিয়েটারে বিশন সাউন্ড ভেসে আসছে।
আমি আবার ঘুমিয়ে পড়ি। রুমের লাইট জ্বালিয়ে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে 3:15 বাজে ঘুম থেকে উঠে। ঘড়ি দেখার সাথে সাথেই আমি আবার বিছানায় পড়ে যাই আমার চারপাশ ব্ল্যাক আউট হয়ে যায়। আর আমি দেখতে পাই যে আমার রুমে আমি বিছানায় বসে আছি আর আমার বারান্দার দরজার সামনে সেই মাছ বিক্রেতা দাঁড়িয়ে।
সে আমাকে খুব কঠিন গলায় বলছে স্যার মাছ তো আপনাকে নিতেই হবে। যদি নেন আপনি বেঁচে যাবেন। না নিলে কেউ বাঁচবে না আমি তাকে বললাম যে আমি মাছ নেব না। তখন সে আমাকে বলল নিবি না ঠিক আছে এবার দেখ কি হয় এই কথা বলে সেই মাছ বিক্রেতা মনে হল হাওয়ায় মিলিয়ে গেল আর আমারও মাথায় কিছু ছিল না। আমি ঘুমিয়ে গেছিলাম।
যখন ঘুম থেকে উঠি তখন দেখি আমার পাশে একজন মেসমেট বসে আছে আর আমি চোখ খুলতেই সে আমাকে দেখে আলহামদুলিল্লা বলল আমার বিছানার সামনে দেয়ালের এনালগ ঘড়ি থাকায় আমি দেখলাম 5 টা 50 বাজে।হঠাৎ তারা আমাকে যা বলল তাতে আমি নিজেকে আর ধরে রাখতে পারছিলাম না। আসলে সময়টা ছিল সন্ধ্যা 5 টা 50 অর্থাৎ আমার জীবন থেকে 14 টি ঘন্টা গায়েব হয়ে গেছে। আমার মেসমেটদের বক্তব্য ছিল যে আমি দুপুর অবধি রুমের দরজা না খোলায় তারা বাড়িয়ালার কাছ থেকে ডুপ্লিকেট চাবি দিয়ে দরজা খুলে দেখে আমি মেঝেতে পড়ে আছি। আর আমার হাতে মাছের আঁশ লেগে আছে এরপর তারা আমাকে বিছানায় উঠে দিয়ে আমার হাত পরিষ্কার করে। রান্না ঘরে খাবার রান্না করতে গেলে দেখে ফ্রিজ থেকে ইলিশ মাছ বের হয়ে মেঝেতে পড়ে আছে আর একটা মাছের গায়ের কোনো আশ ছিল না। এই দেখে তারা কিছুটা অবাক হয় আর আমার হাতের মাঝে আশ দেখে রান্নাঘরের আশ বিহীন মাছ। হিসাবটা মিলানোর চেষ্টা করে পারিনি।
এই মাসে আমি কিছুটা মানসিক ভাবে অসুস্থ হয়ে যেতে শুরু করি। কারণ হঠাৎ এই জিনিস গুলো আমার কাছে খুব আনইজি লাগছিল। আর আগেও কখনো আমার সাথে এমন কিছু হয়নি ভয় পাচ্ছিলাম মানসিক আঘাত পাচ্ছিলাম একইসাথে। সন্ধ্যেবেলা আমার মোবাইলে একটা ফোন আসে ফোন দিছিলো আমার আম্মু। ফোন ধরতেই আম্মু বলেন যে আমি খুব জলদি যেন বাড়ি ফিরে আসি। আমি কারন জিজ্ঞেস করলে আমার আম্মু আমাকে কিছুই বলে না ফোন কেটে দেয় আমি বাড়ি যাবার জন্য বাসের টিকিট কাটতে যাই। কিন্তু সেদিন টিকেট না পেয়ে পরের দিন রাতে বাসের টিকেট নেই।
অফিসের বসকে অনেক কষ্টে ছুটি দেওয়ার কথা রাজি করিয়ে বাড়ি ফিরে এলাম। বাড়ি ফিরে এসে যে সকল দৃশ্য দেখি তা কল্পনার বাইরে আমার স্ত্রী মাইসা সে অসুস্থ তার চোখের নিচে কালি পড়ে গেছে হাত পা শুকিয়ে গেছে। আমি আম্মুকে জিজ্ঞেস করলে আম্মু আমাকে যা বললেন তা উনার ভাষাতেই বলছি আমি।
তুই বরিশাল চলে যাওয়ার কিছুদিন পর রাতের বেলা আমরা সবাই ঘুমিয়ে ছিলাম অন্যান্য দিনের মতোই শেষ রাতের দিকে খুব জোরে চিৎকারের আওয়াজ পাই আমরা শুরুতেই বউয়ের ঘরে গিয়ে দেখি বউ ঘরে নেই। এরপর সারা বাসা খুঁজে শেষমেষ ছাদে গিয়ে অজ্ঞান অবস্থায় পাওয়া যায়। তার মুখে পানি ছিটিয়ে হাত পা মালিশ করে তার জ্ঞান ফেরানো যায়। শেষ বার যে কথাগুলো বলে সেগুলো হলো মাছ মাছ মাছ খাবো ওকে বল আমার জন্য ইলিশ মাছ আনতে। আমাকে এসব বলে তোমার বউ বাচ্চাদের মত কাঁদতে থাকে তাকে শান্ত করে ঘরে নিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেই আমি। কিন্তু সকালে ঘুম থেকে উঠলে ওকে জিজ্ঞেস করি কেন রাতে ছাদে গিয়েছিল। একেবারে অবাক হয়ে বলে কি বলছেন মা আমি রাতে সেই যে বিছানায় ঘুমিয়ে ছিলাম এই কেবলি উঠলাম। এই কথা শুনে আমি মাইশাকে আর কিছু বলি না।
এর পরের দিন সন্ধ্যা হতেই মাইসা ছাদে চলে যায় শুরুতে ভেবেছিলাম যে তোমার সাথে রোজ বিকেলে সন্ধ্যায় চাঁদে যাওয়ার অভ্যাস ছিল কিন্তু তোমাকে মিস করে তাই হয়তো ছাদে যাই। কিন্তু সন্ধ্যায় চাঁদে যাওয়া আমার পছন্দ ছিল না। ভেবেছিলাম দুই এক দিন পর নিজেই যাওয়া বন্ধ করে দেবে। কিন্তু না ওর ছাদে যাওয়া সময় কাটানো আমার অবাক লাগল। ওর শারীরিক পরিবর্তন হচ্ছিল অসুখে যাচ্ছিল। সারা রাত-দিন ঘুমালেও চোখের নিচে কালি পড়ে যাচ্ছিল।
গত পরশু সন্ধ্যায় মাইসা ছাদে যাচ্ছিলো তখন আমি ওকে চাঁদে যাওয়ার জন্য আটকালে। এসে আমাকে আমার কান ওর মুখের কাছে নিয়ে আসে ও ফিসফিস করে বলতে লাগল না-না-না-না-না এই ভুল করিস না। বুড়ি কবর দেখবি। যেতে দে না আমি একবার ওকে দেখবো বুড়ি যেতে দে। আমায় এই কথা বলে মাইশা আবার বাচ্চাদের মত কাঁদতে লাগল এরপর সে ছাদে থেকে রাতের বেলা ঘরে ফিরে মাইশা তোমার বোনের ঘরে যায়। তোমার বোন তখন তার রুমে টেবিলে বসে পড়ছিল মাইশা তোমার বোনের চেয়ারের পেছনে দাঁড়িয়ে তোমার বোনের কানের কাছে মুখ নিয়ে অত্যন্ত আস্তে আস্তে বলে। মেরে ফেল বুড়ি টাকে। আমকে ছাদে যেতে দিতে চায় না। বুড়িটা কবরে যেতে হবে। এই কথা শুনে তোমার বোন মাইশার দিকে তাকিয়ে চিৎকার দেয়। আমরা তার রুমে গিয়ে দেখি মাইশা তোমার বোনের গলা টিপে দাঁড়িয়ে আছে। আর চিৎকার করে বলছে কেন কথা শুনিস না তোরা কেউ কথা শুনছোস না। তুই কি কবর দেখবি।আছে দেখবি দেখবি।
এসব বলতে বলতে সে নিজেই অজ্ঞান হয়ে যায়। এরপর আমরা তাকে বিছানায় শুইয়ে দেই। আর তোমার বোনকে জিজ্ঞেস করি কেন সে তার গলা টিপে ধরে ছিল তোমার বোন তখন আমাদের জানায় যে মায়েশা তার সাথে যেতে বলেছিল মাছ আনতে। যখন সে তাকিয়ে ছিল তখন মায়েশার চেহারাটা কি অদ্ভুত শয়তানি চাপ ছিল তাই সে ভয়ে চিৎকার দিয়েছিল। একটু পরে মায়েশা উঠে বসে তোমার বাবাকে আর তোমার বোনকে একসাথে কাছে ডাকে। আর আমাদের কানের কাছে মুখ নিয়ে এসে ফিস ফিস করে বলতে থাকে।
মাছ এসেছে মাছ আমার নদীতে মাছ এসেছে আমি মাছ শিকার করবো আমাকে ডাকবি ডাক এসব বলা শেষ হলে সে চিতকার দিয়ে উঠে জ্ঞান হারায়। আর তোমাকে ফোন করি ডাক্তার এসে বলেছে সে খুব স্ট্রেঞ্জ আর মানসিক সমস্যা আছে মেয়েটা।
কিন্তু স্ট্রেস এর কারণ কি সেটা মায়াশা ডাক্তারকে বলে না। তার সাথে কোনো কথাই বলে নি। এরপর ডাক্তার কিছু ওষুধ দিয়ে চলে যান।
এবার বল আমি কি করতে পারি আমার মায়ের মুখে সব শুনে আমি আমার আম্মুকে জিজ্ঞেস করি যে মাইশার পরিবারকে এসব জানানো হয়েছে কিনা আম্মু বলেন যে আমার সাথে কথা বলে মায়েশার পরিবারকে জানানোর অপেক্ষায় ছিলেন ওরা। আমি আম্মুকে বলি এখনই জানানোর কোন দরকার নাই। আম্মু আমাকে কারণ জিজ্ঞাসা করলে কিছু না বলে রুমে চলে আসি। কি বলতাম! আম্মু কে? আমার জন্য সব হচ্ছে আমার ভুলের জন্য আমার স্ত্রী এই অবস্থা।
আপনার ভাবছেন আমার কি দায় এখানে?? শুনুন তবে।
কোরবানি ঈদের পরে আমাদের টুকর আমার কলিগ মেহেদী ভাইয়ের গ্রামের বাড়ি এলাকার কাছাকাছি ট্যুরে আমরা গিয়েছিলাম। মেহেদী ভাই আমাদের একদিন রাতের বেলা একটি স্পিরিট কলিং প্রসেসের কথা বললেন আর এও বললেন যে আমরা চাইলে ট্রাই করতে পারি। আমি এসব বিলিভ করি না এবং বিলিভ না করার কারণে বলেছিলাম। স্পিরিট বলে কিছু হয় না। দেখেন আপনারা ট্রাই করে সবাই রাজি হলে মেহেদী ভাই এটি পুরনো বই বের করে মেঝেতে একটি তারকা একে তার চারপাশে চারজন বসিয়ে দেন। একে অপরের হাত ধরে ছিল তারা আমরা ছয় জন ছিলাম আমরা। এক কলিগ খুব ভয় পাওয়ায় সে এক্সপেরিমেন্ট অংশ হয়নি। এরপর মেহেদী ভাই মাটিতে শুকনো পাতা আর চিনি সব দিয়ে আগুন জলে ধোয়া তৈরী করে স্পিরিট কল করেন। 10 মিনিট 15 মিনিট 1 ঘন্টা পার হল কিছু হয় না।
আমি আমার দুই হাত ছেড়ে উঠে পড়তে। মেহেদী ভাই আমাকে ধমক দিয়ে বলেন। তুমি নিয়ম ভাংবেনা নিয়ম ভাঙলে ক্ষতি হবে বসে যাও। আর এই কথা শুনে আমি ছেলের হাসি হেসে রুম থেকে বেরিয়ে যাই এবং বারান্দায় বসে সিগারেট খেতে লাগলাম।
এরপর আমাদের মাঝে কথাবার্তা তেমন হয়নি। আর আমরাও এই বিষয়টা ভুলে গিয়েছিলাম। কিন্তু এবার আমার মাথায় আসলো এই 2-3 দিন আগে আমার সাথে মাছ নিয়ে এই ঘটনার কথা আর আমার ওয়াইফের সাথে ইলিশ মাছ নিয়ে ঘটনা তাহলে অবশ্যই সেই এক্সপেরিমেন্টের কারণে কোন খারাপ কিছু আমার পিছু নিয়েছে। যা আমার ওয়াইফের ক্ষতি করতে চাচ্ছে। আমি আমার মা বাবাকে এসব কি করে বলতাম। আপনারাই বলুন।
এর পরের দিন আমি এলাকার মসজিদের ইমাম সাহেবের কাছে গিয়ে সব ঘটনা খুলে বলে উনি আমাকে বকাঝকা করেন আর বলেন এসব হারাম কাজ করে বিপদ ডেকে আনলে উনি সাহায্য করবেন না। এরপর উনি আমাকে আর একজন হুজুরের একটি ঠিকানা দিয়ে সেখানে যেতে বলেন আমি সেদিনই সেই হুজুরের কাছে যাই আর দেখা করে সব জানাই।তিনি সন্ধ্যায় আমাকে নিয়ে আসন করবেন বলে জানান।
মাগরিবের আজান হলো আমি আর হুজুরের একসাথে নামাজ পরে উনার ঘরে গিয়ে আসনে বসলাম। হুজুর আমার দুই হাত ধরে দোয়া পড়ছিলেন আর তার এক পর্যায়ে হঠাৎ আমার হাত ছেড়ে দিয়ে উনি বললেন অয়ন ভাই আপনি যা ভাবছেন সেটা একেবারে একশভাগ ভুল। সেদিন ওই এক্সপেরিমেন্টে কোন জিন হাজির হয়নি। আর আপনার সাথে যা হয়েছে তা কিছুই না ঐ এক্সপেরিমেন্টের ব্যাপারে মাওলানা হুজুরের মুখে সব শুনে আমি তাকে জিজ্ঞেস করি। তবে আসল সমস্যা কী আমার কথা শুনে হুজুর বলেন আমার বাসায় না গেলে উনি বুঝতে পারবেন না। আর আমার বাসায় যাবার আগে কিছু প্রস্তুতির আছে ওনার। করতে তিন-চারদিন সময় চাই। এরপর অনেক সময় দিয়ে ওনার ফোন নাম্বার নিয়ে বাড়ি ফিরে আসি।
আম্মুকে বলি মায়সার ফ্যামিলির সাথে যোগাযোগ করতে। আমার আম্মু আব্বু তাদের পরিবারের সাথে যোগাযোগ করতে সেখান থেকে উঠে আসে আরও এক চাঞ্চল্যকর তথ্য।
কি তথ্য শুনুন মায়েশার মায়ের ভাষায়। আপনার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি আমি আর মা আর বাবা। আমাদের মেয়ের বয়স যখন দশ বছর ছিল তখন তার একটি মানসিক রোগ দেখা দেয়। সে নিজে নিজে কথা বলতো লেখাপড়া করতো না। আমাদের সবাইকে মারবে বলে চড়াও হয়ে যেতো। অনেক হুজুর কবিরাজ তদবির করেছি আমার মেয়ের কিন্তু সে ভালো হয় না। অবশেষে একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ কে দেখানো হলে। সে বলে এই রোগটা খুবই রেয়ার।এটা লাখ মানুষের মাঝে একজনের হয় নিজেকে ভুলে গিয়ে অন্যের মত আচরণ করা ভায়োলেন্স পার্ক এর পর সব ভুলে যাওয়া। এই রোগের চিকিৎসা মেডিটেশনের নিয়ম এর মত চললে ঠিক হয়ে যাবে। বলে ডাক্তার আমাদের বলেন তিন চার মাস আমার মেয়ের চিকিৎসা হয় আস্তে আস্তে সে ভালো হয় ডাক্তার আমাদের বললেন আমার মেয়ে খুব একা ফিল করে সবার মাঝে থেকেও ওকে এই একাকিত্বের ফিলিংসটা আর যেন ছুঁতে না পারে এমনিতে আর কোন সমস্যা হবে না বলেন ডাক্তার। আমার মেয়েকে ডাক্তার সুস্থ করে তোলেন।কিন্তু দেখেন এবার কি হলো জামাই বরিশাল চলে যাবার পর আমার মেয়েটা আবার একা হয়ে গিয়েছিল। আর সেজন্যই সমস্যা ফিরে এসেছে এসব বলতে বলতে আমার শাশুড়ি কান্নায় ভেঙে পড়েন। ওনাকে আর কোন কিছু না বলে কোন সান্ত্বনা না দিয়ে রাগে আমি আমার আম্মুর হাত থেকে ফোন নিয়ে লাইন কেটে দেই। আমি আমার রুমে চলে আসছি আর ভাবতে থাকে এটা তাহলে মায়েশার মানসিক সমস্যা। ভালো কোন ডাক্তার দেখাবো। তাহলে কি ঠিক হয়ে যাবে। এরপর আমি সেই হুজুর কে কল করে আসতে মানা করে দিই। আর তাকে জানায় যে মায়েশার সমস্যাটা মানসিক। আর ওর বাবা জানিয়েছেন যে মায়েশার মানসিক সমস্যার হিস্ট্রি আছে।
আমরা মাইশাকে ভালো ডাক্তার দেখাই আর ডাক্তারের করা কিছু মেডিসিন আর মেডিটেশনে মায়শা কিছুটা সুস্থ হতে থাকে। ডাক্তারের কাছে গিয়ে সামনে আরো একটি তথ্য পাই যে মাহিশা কয়েকমাসের প্রেগন্যান্ট। ডাক্তারের ভাষ্যমতে প্রেগনেন্সি এই ধরনের সমস্যা হওয়া একেবারে নরমাল নয়।
একদিকে সীমাহীন খুশি আরেকদিকে মানুষিক সমস্যা হচ্ছে। তবে তা বলতে গেলে নরমাল বিস্ময়। আর সবাই মায়শার খেয়াল রাখতে শুরু করে। আমি রোজ সন্ধ্যায় মাইশা কে নিয়ে ছাদে গল্প করি যত্ন নেই। নিয়ম করে খাওয়ানো মেডিসিন দেয়া সব কিছু খেয়াল রাকতাম আমরা সবাই। আস্তে আস্তে আমার যাবার সময় চলে এল। আর আমি বরিশাল চলে এলাম। মেসে ফিরে এক সপ্তাহ পার হয়ে গেল কোন সমস্যা নেই।
হঠাৎ একদিন রাতের বেলা ঘুমের মাঝে আমি কানের কাছে আওয়াজ শুনছিলাম যা চলে যা জীবন থেকে চলে যাও আমি তো শুনে আমি খট থেকে লাফ দিয়ে উঠতেই। আমার রুমের দরজায় নক করার আওয়াজ পাই এবং সেই মাছ বিক্রেতার গলা শুনতে পাই।মাত্র 90 টাকা নিয়ে নেন।স্যার মাছ নেন। এক সময় আমি চিৎকার করে উঠে বলি। তুই আর তোর মাছ জাহান্নামে যাক আমাকে বিরক্ত করিস না। চলে যান আমাকে আমার মতো থাকতে দেন। এরপর সে প্রতিউত্তরে আমাকে বলে দিলেন। স্যার আমার জীবিত মাছ আপনার পথ চেয়ে মরছে। এইবার আপনি কবর দেখেন।এ কথা শুনে আমার শরীর কাপতে লাগলো। ওনার কথা শেষ হতেই আমার হুশ ফিরে মোবাইলের রিংটোন এ।বিছানা থেকে উঠে আমি দেখি আমি ঘামে একাকার হয়ে গেছি। আমি আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করি যে এতক্ষণ যা হচ্ছিল তা বোধহয় স্বপ্ন ছিল। সেই ভাবতে ভাবতে আমি মোবাইল হাতে নিয়ে দেখি আব্বুর ফোন ফোনটা ধরতেই আব্বু কান্না শুরে আমাকে বলে বাবা আয়ান যত তাড়াতাড়ি পারো চলে আসো তোমার বাচ্চা আর নাই। এই কথা শুনে আমার হাত থেকে ফোন পরে যায় আমার পায়ের নিচের মাটি সরে যায় আমি এইমাত্র স্বপ্নে দেখলাম আমাকে কবর দেখানো হবে। আর আমার বাচ্চা এই দুনিয়াতে নেই কিভাবে কি হল জানার জন্য আমি বাড়ি উদ্দেশ্য রওনা দিলাম।
বাসে করে যাচ্ছিলাম কিন্তু আমার কানের কাছে সেই আওয়াজ আসছিল আমার আমার মাছ নাই আজকে আপনার মাছ শিকার করলাম। মাছ মাছ মাছ মাছ সেই জলে বাতাসে মিশে যাচ্ছিল সেই আওয়াজ। আর হালকা করে শুনতে পাচ্ছিলাম এরপর আমি ঘুমিয়ে যাই।বাস থামলেই বাড়ি পৌঁছে আমি আমার বোনকে বাড়িতে একা পাই। এরপর আমি তাকে নিয়ে হাসপাতালে উদ্দেশ্যে রওনা হই। রাস্তায় আমার বোনের মুখে আমি সব ঘটনা শুনি।
তার ভাষ্যমতে আমি ঘটনাগুলো বলছি ভাইয়া তুমি যেদিন চলে গেলে সেদিন রাতে আমি পানি খেতে উঠে রান্না ঘরে গিয়েছিলাম। গিয়ে দেখি মাইশা ভাবি ডাইনিংয়ে চেয়ারে বসে আছে। আমিতো ভয় পেয়ে যায় দেখে উনাকে জিজ্ঞেস করি উনি কেন ওখানে এত রাতে বসে ছিলেন। উনি আমাকে ইশারায় ওনার মুখের কাছে আমার কান নিয়ে যেতে বলেন আমি তার মুখের কাছে নিয়ে যেতে বলেন মাছ আছে আমার পেটে একটা আমি কেটে বের করে দেই। তুই রান্না কর। ৃউপর হয়ে মেঝেতে বসে পড়েন আর মাটিতে কাঁদছিলেন। আর বলতে লাগলেন মাছ মাছ। এই আচরন দেখে আমি চিৎকার করে উঠলে আম্মু আব্বু এসে মায়শা ভাবিকে ধরে বিছানায় নিয়ে যান। মাঝে মাঝে আব্বু আম্মুকে গালাগাল দিচ্ছে।বলছিলেন তোরা কেও মাছ খাস না তোদের ছেলে খায় না মেয়ে খায় না আর তোরাও খাস না। তোদের ছেলেকে কত করে বললাম আমার মাছ নিয়ে যেতে। কিন্তু নেয়নি তাই তাই আমি তোর ছেলের মাছ নিয়ে যাব দেখ দেখ ওই যে কবর খুঁড়ে রেখেছে মাছ কবর দেবো।
এসব বলে ভাবি জ্ঞান হারান তার পাশেই সেদিন আমরা সারারাত বসে ছিলাম। সকাল উঠে ভাবি আমাদের বলেন যে রাতের বেলা বাড়ির ছাদে যাবে। আমাকে বলেন আম্মু আব্বুকে মেরে ফেলতে আর তোমাকেও জেন মেরে ফেলা হয়। এরপর ভাবিকে ডাক্তারের কাছে নিলে ডাক্তার কিছু ওষুধ দিয়ে পাঠিয়ে দেন। এরপর আমি সারাদিন ভাবির এ সমস্ত সমস্যার দেখাশোনা করি। একদিন রাতের বেলা উনাকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। ছাদে গিয়ে দেখা যায় উনি ছাদের কোনে বসে ধারালো লোহার টুকরা দিয়ে নিজের হাত কাটছেন আর পেটে কাটাচ্ছেন আর পেট থেকে বের হওয়া রক্ত খাচ্ছেন।
এসব দেখে আমরা খুব ভয় পাচ্ছিলাম কিন্তু ডাক্তার বলছিলেন যে প্রেগনেন্সি অনেক সমস্যাই হয়।আর তুমিও দু এক দিন হল চাকরিটা ফিরে গেছে। তাই তোমাকে আর ফোন করে বলিনি। কারণ এমন বারবার ছুটি নিলে তোমার চাকরি কিভাবে থাকবে। সংসারী কিভাবে চলবে। এরপর একদিন রাতের বেলা আমি আমার রুমে ঘুমাচ্ছিলাম হঠাৎ আমার রুমে কুকুরের ডাক শুনে আমি লাফ দিয়ে বিছানা থেকে উঠে যাই। আর আমার রুমে কুকুরের ডাক কোথা থেকে এলো দেখেতে থাকি। এর মাঝে হঠাৎ পচা মাছের গন্ধ দিয়ে আমার রুম ভরে যায়। আমি বিছানা থেকে উঠার জন্য পাস ফিরে দেখি মাইশা ভাবি বাজে হাসি নিয়ে আমার পাশে শুয়ে আছে আর কুকুরের আওয়াজ ইনি মুখ দিয়ে করছিলেন। আমি ওনার শরীর থেকে রক্তের গন্ধ পাচ্ছিলাম আর তাই তাকে জিজ্ঞাসা করি যে কেন এখানে রক্তের গন্ধ কেন। কেন তিনি এইরকম কুকুরের আওয়াজ করছেন। তখনই সে মুখে হাত দিয়ে ধরে ফেলেন। আর কানের কাছে মুখ এনে তিনি বলেন মাছ শিকার করেছি এই বলে সে আমার হাতে একটি ছুরি ধরিয়ে বলেন যা বুড়ি কে মেরে কবরের ধাক্কা দিয়ে ফেলে দে। আমার হাতের চুড়ির স্পর্শ পেতেই আমি ছুরিতে আঠালো কিছুর আভাস পাই। আর ভাবীর হাত সরিয়ে জোরে চিৎকার দেয়। আমার চিৎকারে আব্বু-আম্মু এসে লাইট অন করে যা দেখেন। সেটা বলা যায় না।
আমরা দেখি আমার ভাবীর পেট থেকে রক্ত পেরিয়ে বিছানা ভিজে গেছে শরীরের কাপড় কাটা ওনাকে ধরে বিছানায় শুইয়ে আমি আর আম্মু পিঠের কাপড় সরিয়ে দেখি উনার পিঠে দুই তিনটা স্টেপ এর দাগ বুঝতে বাকি রইলো না যে ভাবি কি করেছেন। তৎক্ষণাৎ তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ডাক্তার জানান বাচ্চা আর বেঁচে নেই। আমার বোনের মুখে সব শুনে আমি রাগে দুঃখে একাকার হয়ে যাই আর মনে মনে বলতে থাকি। মাছ নিয়ে এত ঘটনা ঘটে গেলো।এরপর আমি হাসপাতালে গিয়ে দেখি আমার শশুর শাশুড়ী সহ অনেকেই সেখানে উপস্থিত আছেন। আমি তাদের সাথে দেখা করি সে ঘুমোচ্ছে তাকে ঐ অবস্থায় দেখে আমার মরে যেতে ইচ্ছা করছিল। এর পর এসব কোনো শুধুমাত্র মানসিক সমস্যা নয় তা বুঝতে পারি আমরা সবাই। আর আমি সেই হুজুরকে ফোন করি যার সাথে আগে দেখা করছিলাম।
সেদিন রাতে আমাদের বাসায় হুজুর আসেন এবং আসন করেন। এর আগে হুজুর হাসপাতালে গিয়ে মাইশাকে দেখে আসেন আর আমাদের কাছ থেকে সবকিছু জেনে নেন। আমাদের বাসায় এসে হুজুর আসন করেন আর কিছুক্ষণ পরে উনি বলতে শুরু করেন। উনার কথার ভাষায় আমি বলছি অয়ন ভাই আপনার স্ত্রীর ওপর খবিশ জিন এর ভর হয়েছে ভাই। ধিরে ধিরে সে আপনাদের পরিবার শেষ করে দেবে। আপনি যে স্বপ্ন দেখছেন সেগুলো সেই দেখাতো আর লক্ষ্য ছিল আপনাকে পাগল করে দেয়া। আর সে মাছ বিক্রেতার রূপ ধরে আপনার সাথে ছলনা করছে। আমি হুজুরকে জিজ্ঞেস করলাম যে নির্ভর করার কারণ কি?? উত্তর হুজুর বললেন ভাই আপনার স্ত্রীকে নিয়ে রোজ সন্ধ্যায় ছাদে যেতেন।আর আপনি যেদিন চলে যান বরিশাল। তারপর দিন বা কিছুদিনের মাঝেই সন্ধ্যায় আপনার স্ত্রী ছাদে যায় তার চুল ছিল খোলা সন্ধ্যা বেলায় আপনার স্ত্রীকে দেখে সেই জিন আকৃষ্ট হয়ে যায়। আর মাইশা ভাবিকে নিয়ে যাবে বলে ঠিক করে।মাইশা ভাবি প্রেগনেন্ট থাকায় সে রেগে যায়। তাই ঠিক করে যাকে ভালবাসে তার কাছ থেকে অন্যের বাচ্চা সে আনতে দেবে না। তাই সে আপনার বাচ্চাকে হত্যা করল। আর আপনাকে পাগল বানিয়ে স্ক্রিন থেকে দূরে সরিয়ে তার মা-বাবাকে মেরে সে আপনার স্ত্রীকে নিয়ে যেতে চাচ্ছিল।
উনার কথা শুনে আমি উনাকে জিজ্ঞাসা করলাম। আমাকে কেন মাছ খাওয়াচ্ছে সে। হুজুর বললেন ঐ মাছের মাধ্যমে আপনাকে বশ করে পাগল বানাতে চাইছিলো। কিন্তু আপনি সেই মাছ নানেয়ায় সে আপনাকে ধোঁকা দেয়। এই বলে যে আপনার মাছ মারবে। আসলে মানে হচ্ছে আপনার সন্তান যাকে ইতোমধ্যে সে মেরে ফেলেছে। এরপর এই সমস্যার পরিত্রান চাইলে হুজুর আমাদের বলেন যে এর একমাত্র সমাধান হচ্ছে রুকাইয়া। আমরা যারা মুসলমান আছি সবাই জানি যে রুকাইয়া জিনিসটা আসলে কি।যারা জানেন না তাদের জন্য বলছি রুকাইয়া হচ্ছে। মুসলিম জিন ছাড়ানোর প্রসেস। ঘটনায় মাইশা অসুস্থ ছিল। তাই হুজুর আমাদের বলেন 15 দিন পর মাইশার রুকাইয়া হবে।
১৫দিন পর হুজুর আরো চারজন হুজুর সাথে নিয়ে আসলেন মাইশার রুকাইয়া করতে।হুজুর একটা ইসলামিক বই বের করলেন আর লাইট অফ করে কয়েকটা মোমবাতি জ্বালিয়ে আমাদের বললেন। যাই হয়ে যাক ভাবিকে ছাড়বেন না মায়া করবে কান্নাকাটি করবে ভয় দেখাবে আঘাত করবে আপনারা দুর্বল হবেন না। এরপর হুজুর বাকি চারজন হুজুরকে বললেন মোমবাতি নিয়ে রুমে চার কোণায় গিয়ে দাঁড়াতে। এরপর সবাই সবার হাতে থাকা বই খুলে দোয়া আর সূরা পড়তে শুরু করলেন। আমি আর আমার আব্বু শহ আমার বোন মায়েশার হাত ধরে রেখেছিলাম। দোয়া পড়া সময় মায়শার শরীর ভেজা। আর মায়েশা মুখ দিয়ে এমন শব্দ করছিল যেন সে নিঃশ্বাস নিতে পারছি না দেখে মনে হচ্ছিল মাইশা খুব কষ্ট হচ্ছে। এরপর মাইশা ঘাড় ঘুরিয়ে আমার কানের কাছে বলতে লাগল এবার বড় হুজুর কি করবে ও তো নিজেই নিজের রক্ষা করতে পারবে না। কবর দেখবি কবর এই বলে সে আমার চেহারা বরাবর একটি ফু দিল আমি বেহুশের মত হয়ে গিয়েছিলাম। আর দেখতে পেয়েছিলাম আমি জঙ্গলে পড়ে আছি আর আমার সামনে একটি কবর খোঁড়া। কবরের একটা লাশ যার মুখের দিকে কাপড় খোলা মুখটা দেখি সেই হুযুর এই দেখ আমি চিৎকার করে ওঠি। আর আমার মনে হতে লাগল আমার উপর বৃষ্টি পড়ছে।
হঠাৎ আমার হুশ ফিরে এলো আমি দেখলাম হুজুর আমার হাত ধরে ঝাকিয়ে বলছেন ভাই বলেছিলাম না ধোকা দিবে শক্ত হন। এরপর হুজুর আবার দোয়া পড়তে লাগলেন আমি চোখ বন্ধ করে মাইশাকে ধরেছিলাম। কিছুক্ষণ পর আমার কানে সেই বৃদ্ধ মাচলা আওয়াজ শুনতে পাই যাচ্ছি আমি চলে যাচ্ছি। কিন্তু তোর সন্তান কে সাথে নিয়ে যাচ্ছি। ছেলের লাশ দেখবি না। ছেলে কে দিয়ে দিবি। জিনের মুখে এসব শুনে চোখ খুলিনি আমি। আর মাইশা আস্তে আস্তে নিস্তেজ হয়ে গেলো।আর চারপাশ থেকে উচ্চস্বরে শুনতে পেলাম আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহু আকবার।
এর পর হুজুর আমাদের চোখ খুলতে বলেন। চোখ খুলতেই আমার আম্মুকে দেখলাম রুমের লাইট অন করতে। আর আমার বোন পানি এনে মাইশার মুখে ছিটিয়ে দিলো। আমি আর আম্মু মাইশার হাত পা মালিশ করতে লাগলাম। একটু পর জ্ঞান ফিরে এল ও বলল কি হল আমার আমার মনে হচ্ছে আমার ভেতর থেকে কোনো বড় একটা বোঝা চলে যাচ্ছে। কি হয়েছে বলোতো। মাইশার কথা শুনে হুজুর মুচকি হেসে বললেন যা হবার ছিল হয়ে গেছে।আপনি নিশ্চয়ই জানেন আপনার সাথে কি হয়েছে। যাইহোক আল্লাহর রহমতে আর কিছু হবেনা ইনশাল্লাহ। আপনাকে আমি একটা তাবিজ দিয়ে দিচ্ছি। সাতদিন পর খুলে ফেলবে আর কখনোই সন্ধ্যার পর ছাদে যাবেন না এই বলে তাবিজটা দিয়ে হুজুর চলে যান। _সমাপ্তি _