ব্রিজের ওপর এক রাত্রিতে বাংলা ভুতের গল্প
ব্রিজের ওপর এক রাত্রিতে
আমার নাম মোঃ মাসুম খান। যদি ঘটনাটি ভালো লাগে শোনার অনুরোধ রইল।
কথাটি 2013 সালের জানুয়ারি মাসের শুরুর দিকে। তখন আমি কলেজে পড়তাম সময়টা ছিল শীতকাল কলেজ তখন বন্ধ ছিল। আমি এবং আমার দুই বন্ধু আর আমার ফুপাতো ভাই এক বাসায় থাকতাম। বশিরভাগ সময় কলেজের পেছনে বসে থাকতাম। আমি আমার দুই বন্ধু ফাহিম এবং আদিল ও আমার ফুপাতো বড় ভাই সুমন। সুমন ভাইয়ের বাড়ি নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলা। সুমন ভাইয়ের সাথে আমার সম্পর্ক খুবই ভালো। আমরা প্রায়ই একসাথে বসে আড্ডা দিতাম। একদিন আড্ডার সময় মুভি নিয়ে আলোচনা শুরু করেন। আর এক পর্যায়ে ফাহিম সুমন ভাইকে জিজ্ঞেস করল সুমন ভাই তোমার বাড়িতো পাহাড়ের কাছে তোমাদের এলাকায় ভৌতিক কোন কাহিনী থাকলে আমার সাথে শেয়ার করো। সুমন ভাই বলল তেমন কিছু নেই। কিন্তু আমাদের গ্রামে একটি অনেক পুরনো ব্রিজ আছে যেখানে মাঝে মাঝে অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটে। যদিও খুব কম ঘটে। তবে অতীতে অনেক ঘটনা ঘটেছে তার মধ্যে লোকমুখে শোনা কয়েকটি ঘটনা জানাই।
একবার একলোক সন্ধ্যায় সাইকেল চালিয়ে ব্রীজের উপর দিয়ে যাচ্ছিল হঠাৎ কিছু বুঝে ওঠার আগেই তার সাইকেল সহ ব্রিজ থেকে পড়ে গেল। আবার আমাদের গ্রামের বিখ্যাত কুস্তিগীর জলিল মিয়া যাত্রা দেখতে পাশের গ্রামে গিয়েছিল। যাত্রা শেষ করে আসতে আসতে অনেক রাত হয়ে গিয়েছে। তখন ব্রিজ পার হচ্ছিলেন এবং পেছন থেকে কর্কশ কন্ঠে শুনতে পেলেন। কুস্তি রাখার জন্য কেউ তাকে আহবান করছে এবং ভাই বলে ডাকছে। জলিল মিয়া ভয় আমতা আমতা করতে বলে উঠলো। পরক্ষণেই কিছু বুঝে ওঠার আগেই তাকে পেছন থেকে কিছু এটা চেপে ধরলো। জলিল মিয়ার বললেন কি করছেন কিন্তু তিনি কখনই এত শক্তির অধিকারী কারো সাথে কখনো কুস্তি করেননি। তার কথা অনুযায়ী ওটা এত বেশি শক্তি ছিল যে তিনি নরতে পারছিলেন না। এরপর জলিল সিয়ার সাথে আর কিছু ঘটেনি। সকালবেলা কৃষকরা কাজ করতে বের হয় তখন পাশ দিয়ে ক্ষেত থেকে দেখেন একটা মাথা দেখা যাচ্ছে। যখন কাছে দেয় তখন দেখতে পায় মাথাটা জলিল মিয়া। এবং জলিল মিয়ার পা থেকে গলা পর্যন্ত মাটির নিচে। শুধু মাথাটা উপরে এটা দেখার পর তাকে তুলে নিয়ে বাড়ি পৌঁছে দেয়। জ্বলিল মিয়া তাদের সব কিছু বলেন। এই ঘটনার কিছুদিন পর জুলি কুস্তিগীর কুস্তি বন্ধ করে দেন এবং তার শরীর শুকিয়ে কাঠ হয়ে যায়। তার কিছুদিন পর তিনি মারা যান। এই কথা শোনার পর আমরা সবাই অবাক হয়ে যাই এবং সুমন ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে থাকি। তাকে জিজ্ঞেস করি এটা কিভাবে সম্ভব। তিনি বলেন এটা আমাদের গ্রামের সবাই জানে।
আমাদের বয়স কম হওয়ায় আমরা কৌতুহলবশে সুমন ভাইয়ের বাড়িতে বেড়াতে যাবএবং ঐ ব্রিজে রাতের বেলা ঘুরতে যাব ঠিক করি। সুমন ভাই আমাদের অনেক নিষেধ করেন তিনি আমাদের বোঝান। কিন্তু আমরা কিছুতেই বুঝতে চায় না তাহলে আমাদের কিছু হলে তিনি আমাদের বাবা-মাকে কি জবাব দিবেন। এগুলো আমরা বাসায় কাউকে জানাবো না। তুমি আমাদের নিয়ে চলো সুমন ভাই। আমাদের এই কৌতুহল আমাদের জীবন একটা ভয়ংকর পরিণতি ইতিহাসে। ভালো যে আমরা সবাই সেখানে যাওয়ার আগে কিছু ঘটতে পারে ভেবে আয়তল কুরসি এবং বিভিন্ন সূরা মুখস্ত করে যাই।
সুমন ভাইকে নিয়ে আমরা কলমাকান্দা পৌঁছে যাই পাহাড়ের সৌন্দর্য দেখতে দেখতে আমরা সুমন ভাইয়ের বাড়ি পৌছায় সঙ্গত কারনে আমি গ্রামের নাম প্রকাশ করছি না। যথারীতি আমরা সারাদিন ঘোরাঘুরি পর সন্ধ্যার দিকে বাড়ি চলে আসলাম। বাড়িতে বিশ্রাম নিয়ে রাতের খাবার খেয়ে আমরা 9 টার দিকে ব্রিজে গেলাম যদিও সুমন ভাই আমাদের নিয়ে যেতে চাচ্ছিল না। কিন্তু আমরাও নাছোড়বান্দা আমি খুব জোরাজুরি করে সুমন ভাইকে নিয়ে ব্রিজের উদ্দেশ্যে রওনা করি। বাড়ি থেকে বেশ দূরে ব্রিজ। পৌঁছাতে প্রায় 45 মিনিট সময় লাগে। সে সময় আমাদের কারো কাছে স্মার্টফোন ছিল না সাধারন ছিল তাই আমরা সবাই একটি করে টর্চ সাথে নিয়ে যাই। শীতকাল হওয়ায় ব্রিজের নিচে কোন পানি ছিল না। একদম শুকনো ব্রিজ এর আশেপাশে যত দূর চোখ যায় ততদূর পাহাড়। সেদিন আকাশে বেশ সুন্দর চাঁদ উঠেছিল যদিও কুয়াশার কারণে বেশি আলো নিচে পড়ছিল না তবুও অল্প আলোতে অনেক কিছুই দেখতে পাচ্ছিলাম। ব্রিজের উত্তর পাশে ছিল মাঝারি আকারের উঁচু পাহাড় পাহাড় থেকে সম্ভবত পাহাড়ি খালের সৃষ্টি এবং সেই খালের জন্যই ব্রিজ তৈরি করা হয়েছে। এবার মূল ঘটনায় আসি।
ব্রিজে বসে আমরা গল্প গুজব করছিলাম রাত একটা পেরোলো হঠাৎ একটা আলো দেখলাম আমরা। আমাদের দিকে এগিয়ে আসছিল আলোটা কাছাকাছি এলে দেখতে পেলাম সাদা পাঞ্জাবি পরিহিত একজন বৃদ্ধ হারিকেন হাতে আমাদের দিকে এগিয়ে আসছে। আমাদেরকে দেখে তিনি একটু রাগান্বিত কন্ঠে বললেন এত রাতে এখানে কি করছিস তোরা। তোরা কারা এই গ্রামে কোনদিন দেখি। নি ফাহিম বলল চাচা আমরা এই গ্রামে বেড়াতে এসেছি ঘুম আসছিল না তাই আমরা একটু হাঁটাহাঁটি করছিলাম চলে যাব চাচা আপনি চিন্তা করেন না। আমরা আর একটু পরে চলে যাব। চাচা বলল জায়গাটা ভালো না তো তাড়াতাড়ি এখান থেকে বাড়িতে যা। বেশিক্ষণ থাকিস না আমরা বললাম ঠিক আছে চাচা। তারপর তিনি চলে গেলেন আমি সুমন ভাইকে জিজ্ঞেস করলাম ভাই লোকটা কে চেনেন। সুমন ভাই বলল নারে চিনি না। কত বছর ধরে গ্রামে আসি না চিনবো কি করে। হয়তো আশেপাশে কোন গ্রামের মসজিদের ইমাম হবে।
তারপর আমরা আমাদের মতো করে গল্প করতে লাগলাম আমরা অনেক আশা নিয়ে এসেছিলাম যে আমাদের সাথে কিছু একটা হবে। কিন্তু আমরা তখনও কিছু দেখতে না পারায় খুব হতাশায় ছিলাম আমরা বীজের রেলিঙে বসে বোর ফিল করছিলাম। তখন ফাতিন তার হাতের ঘড়ি টি খুলে নড়াচড়া করছিল। হঠাৎ তার হাত থেকে ঘড়িটা পড়ে যায়। আমরা সবাই ব্রিজের নিচে টর্চ মারলাম এবং ঘরিটা দেখা যাচ্ছিল ব্রীজের নিচে খালি ছিলো একদম। আমি বলে উঠলাম যা আমরা টর্চ ধরেছি তুই নিয়ে আয় তখন আমরা কেউই বুঝতে পারছিলাম না যে আমাদের সাথে কি ঘটতে যাচ্ছে। আদিল হাতে থাকা টর্চ নিয়ে নিচে নামতে লাগল। ব্রিজের নিচে যেতেই আমরা মজা করে আমাদের টর্চ অফ করে দিলাম। আদিল সেটা বুঝতে পেরে আমাদের বলে উঠলো কিরে মজা নিচ্ছিস এখানে এসে তো কোন কিছু দেখতে পেলাম না তোর আমাকে ভয় দেখিয়ে যদি মজা পায় তাহলে মজা কর আমি মোটেও ভয় পাচ্ছি না। আমি ফাহিম সুমন ভাই তখন আদিলের দিকে খেয়াল না করে গল্প করতে লাগলাম। কিছুক্ষণ যাওয়ার পরে দেখলাম আদিল আসছে না। ফহিম বলল কিরে আদিল এখন কি তুমি আমার সাথে মজা নিচ্ছ তাড়াতাড়ি উঠে এসো আমরা চলে যাব।আদিল এর কোন সাড়াশব্দ নেই। আমি ডাক দিলাম আদিল কই তুই সত্যি সত্যি চলে যাব ফাহিম আমাকে বলল চল দেখে আসি আমরা তিনজন টর্চ জ্বালিয়ে নিচে যেয়ে দেখি আদিল নেই আমরা সবাই তখন ভয় পাচ্ছি। আদিল আদিল বলে ডাকছি কিন্তু আদিল কোন সাড়াশব্দ দিচ্ছে না।
নিজে নিজে অনেক খোঁজাখুঁজির এক পর্যায়ে আমরা আদিল এর মোবাইলটা মাটিতে দেখতে পাই। পরক্ষনেই আমি কিছু বুঝে ওঠার আগেই আমাদের তিনজনের টর্চ একসাথে অফ হয়ে যায়। আমরা তখন আরও বেশী ভয় পেয়ে যায় আর অদ্ভুতভাবে চারদিক থেকে অনেক কুকুরের শব্দ আসে। আর ব্রিজের উপর থেকে জল পড়ার শব্দ আসে আমাদের কানে আমরা নিচ থেকে উপরে উঠতে থাকি। ব্রিজের কাছাকাছি আসার পর আমরা যা দেখতে পাই তা দেখার জন্য আমরা প্রস্তুত ছিলাম না। আমরা দেখতে পাই বিশাল এক কালো মূর্তি দাঁড়িয়ে আছে। মূর্তিটার চুলগুলো ছেড়ে অনেক লম্বা হালকা ছিল সেগুলো তার পায়ের কাছে আর একটা কালো অবয়ব দিয়েছিল সেটা আমাকে। আমরা এই দৃশ্য দেখে এতটাই ভয় পেয়েছিলাম যে আমরা সেখানে দাঁড়িয়ে রইলাম। হঠাৎ আমরা অনুভব করলাম যে আমাদের উপর অশরীরী কিছু এতটাই চাপ দিচ্ছে যে আমরা কেউ নিজেদের জায়গা থেকে নড়তে পারছি না। এমনকি আমরা কেউই কোনো কথা বলতে পারছিলাম না। আমি ভয়ে চিৎকার দিচ্ছিলাম কিন্তু আমি বুঝতে পারছিলাম যে আমার আওয়াজ বের হচ্ছে না।এমন সময় সুমন ভাইয়ের মুখ থেকে বিড়বিড় করে আওয়াজ বেরিয়ে এলো আওয়াজ শুনে মনে হচ্ছিল তিনি আয়াতুল কুরসি পরছেন। এটা বোঝার পর আমি আয়তাল কুরসি পড়ার চেষ্টা করি। যতই আয়াতুল কুরসি পড়ার চেষ্টা করছি মনে হচ্ছিল যে আমাদের ওপর চাপ আরো বেড়ে যাচ্ছে। আমার মনে হচ্ছিল আমার পা হয়তো মাটি ভেদ করে ফেলবে। সেই কালো অবয়ব এখনো দাঁড়িয়ে আছে এক পর্যায়ে আমরা তিনজনই অনেক কষ্ট করে আয়াতুল কুরসি পড়তে সক্ষম হয়। এরপর আমরা অনুভব করতে পারি যে আমাদের ওপর থেকে অশরীরের চাপ টা কমে যাচ্ছিল। আর নড়াচড়া করতে পারছিলাম আমরা তখন জোরে জোরে আয়াতুল কুরসি পড়তে থাকি। আমাদের আয়াতুল কুরসি পড়ার শব্দে ওই অভক্তির উপরের দিকে দুটি লাল বস্তু জ্বলে উঠল। আমাদের বুঝতে বাকি রইলো না যে ওই আলো দুষ্টু ওই অবমুক্তির চোখ। আমরা তখনও আয়তাল কুরসি পড়া থামায়নি আমি লক্ষ্য করছিলাম যে অবয়বটি আস্তে আস্তে পিছাচ্ছে। আমরা এবার কিছুটা সাহস করেই এগিয়ে যাই।সেখানে আদিলের দেহ দেখতে পাই। দেহ দেখে খুবই ভয় পেয়ে যাই। আমরা আয়তাল কুরসি পড়া বন্ধ করে আদিল কে জাগাতে চেষ্টা করি। আদিলের মুখে আচরের দাগ দেখতে পাই। সুমন ভাই 5 মিনিট চেক করে এবং আমাদের জানায় যে সে ঠিক আছে। শুধু আচর ল দিয়েছে। একথা শুনে একটু শান্তি পাই। কিন্তু আমাদের এই শান্তি বেশিক্ষণ থাকেনি আমরা দেখছিলাম চারিদিক থেকে শৈতপ্রবাহ আমাদের দিকে খুব বেগে এগিয়ে আসছে। চারি দিকে অনেকটা ঝড়ের মত বাতাস বইতে থাকে। পূর্ণিমার আলো কমতে থাকে আস্তে আস্তে চারিদিক অন্ধকার হতে থাকে। এরই মধ্যে আকাশে লক্ষ্য করি যে পাহাড়ের দিক থেকে অনেক ধুলো।আসছে চারদিকে এতটাই অন্ধকার যে আমরা কিছু দেখতে পারছিলাম না।আমরা তাড়াতাড়ি সেখান থেকে আদিল কে নিয়ে আয়াতুল কুরসিপড়তে পড়তে দৌড়ে পালিয়ে যাই।
তারপর আমি আর আদিল প্রায় ১মাস অসুস্থ ছিলাম। এরপর আস্তে আস্তে কবিরাজের ওসুধে আমরা ঠিক হই।আর কোনো দিন সেখানে যাইনি।
এই ছিলো আমার ঘটনা স সমাপ্তি _