বর্ষায় ভেজা দিন বাংলা রোমান্টিক গল্প।

 বর্ষায় ভেজা একদিন, বাংলা রোমান্টিক গল্প। 

আজ সারাদিন ধরে বৃষ্টি হচ্ছে। আজ একটি স্মৃতি খুব নারা দিচ্ছে, খুব মনে পরে সেই তারে নিলপার শাড়ী জড়ানো,মুখে অম্লান হাসি,
যেনো পুর্ণিমার চাঁদ। বসে বসে নিলুফার কথা ভাবছিলুম এমন সময় কেউ একজন দরজায় কড়া নাড়লো।চিঠি এসেছে। মামা লিখেছেন তাদের পটুয়াখালী তে যেতে হবে । মামাতো ভাই এর বিয়ে আমাদের নেমন্তন্ন। চিঠি টা বাবা অফিস থেকে ফিরলে তাকে দিতে হবে। 

অমরা কলেজের বন্ধুরা ৫-৬জন মিলে সিলেট গিয়েছিলাম, সেখানে শাহজালাল শাহপরান মাজার গিয়েছিলাম, সুরমা নদীর পাড়ে আমরা ক্যাম্প তৈরি করে রাত কাটিয়েছিলাম।অনেক রাত অকদি আমরা গল্প করেছি, আড্ডা দিয়েছি, বারবিকিউ, কোক,আরও অনেক ধরনের খাবার ছিলো। লিজেন্ডরা বুঝবে

সকালে আমরা হাকালুকি হাওর দেখতে গিয়েছিলাম,আমার বন্ধুদের নজর সব সময় মেয়ে দের দিকেই থাকতো।কোনো  মেয়ে তাদের দেখে একটু মুচকি হাসলেই👩👧 যেনো ওরা ধন্য হয়ে যায়। সব সময় এই প্রতিক্ষায় ওরা থাকতো। অবশ্য আমিও সুফি নই 🤗আমিও তাকিয়েছিলাম তার চোখে চোখাচোখি করার আশায়, তাবে আর কারো  দিকে তাকাইনি।আপনারা হয়তো ভাবছেন চাপাবাজি করছি,কেননা,  এতো মেয়ের ভিতর শুধু একজন কেই দেখছি, ব্যাপারটা হজম হচ্ছে না।

অসলে মসাই প্রথম থেকেই ওকে ফলো করছি, ও যেদিকে গেছে অমরাও ঐদিকে গিয়েছি।যদিও বন্ধুরা যেতে রাজি ছিলো না। তখনো ওদের বলিনি অমার ভালো লাগার কথা। আর তারা বুঝিতেও পারেনি। 

সে যাইহোক, 
আমরা হাকালুকি হাওর থেকে ফিরছি এমন সময়    প্রচন্ড বৃষ্টি শুরু হলো,সবাই ছুটোছুটি শুরু করে দিলো, যেহেতু হাওর টি তোলা তাই সবাই নিরাপদ অশ্রয় নিচ্ছিলাম। মানুষের হুড়োহুড়ি তে আমি দলচ্যুত হয়ে গিয়ে একটা গাছের নাচে দাঁড়িয়ে ছিলাম, হঠাৎ দেখলুম একটি মেয়ে হাসি মুখে বৃষ্টি উপভোগ করছে।নিল শাড়ী, ঝাকড়া চুল, ডান পাশের গালে নিচের দিকে একটা তিল যার কারণে মনে হচ্ছে যেনো কোনো জলপরী।  এমনিতে আমি বৃষ্টি তে কম বিজি কিন্তু সেদিন কেন যেনো তাকে দেখে আমি তার সাথে কথা বলার জন্য বৃষ্টিতে ভিজলাম। আশেপাশে কেউ নেই তবু্ও আমি চেচিয়ে বললাম, হাই।সে হেলো বলেই কেমন যেনো লজ্জায় আড়ষ্ট বোধ করলো।

তুবও আমি তার কথা চালিয়ে গেলাম।  বৃষ্টি প্রায় শেষ, হালকা গুড়ি গুড়ি হচ্ছে। কিন্তু ততক্ষণে ও আমার সাথে কথা বলতে আগ্রহী হয়ে গিয়েছে,।তাই আমি যদি ওর বাড়ির ঠিকানা বা ফোন নাম্বার নেয়া যায়। 🤗 আমি তার কাছে বাড়ির ঠিকানা বা ফোন নাম্বার চাইলাম। কিন্তু সে নাম্বার দিলোনা শুধু যদি আমাকে তুমি ভালোবাসো তবে তুমি আবার আমাকে খুঁজে পাবে। আমি বলেছিলাম তা না হয় খুঁজে নিবো, কিন্তু তোমার নামটা অন্তত বলে যাও।সে বলেছিলো নিলুফা তার নাম, আর বলেছিলো ঢাকাতেই নাকি থাকে। 

আবার বেল বাজলো বাবা এসেছেন। বাবা কে  মামার চিঠিটা দিলাম। বাবা বললেন তোমরা যাও আমি বিয়ের একদিন আগে চলে আসবো। অফিসে কাজের চাপ একটু বেশি।বছরের শেশেরদিক তো তাই একটু কাজের চাপ বেশি।আমার তো মনে অনেক খুশি লাগছিলো কারণ বাবার অবর্তমানে আমিই হেড ওফ দা ফ্যামিলি 🐱।কাল সকালেই আমরা পটুয়াখালী রওনা হবো।সবাই যে যার গোছানো নিয়ে ব্যস্ত। আর আমি নিজের হেড হবার সুযোগ এখন থেকেই কাজে লাগাচ্ছি। ছোটো ভাই কে দিয়ে নিজের ব্যাগ গোছানো ঘর পরিস্কার ইত্যাদি কাজ করিয়ে। 

স্টেশনে মামা আমাদের জন্য গাড়ি নিয়ে দাড়িয়ে ছিলেন। একজন কুলি ডেকে মালপত্র সব গাড়িতে উঠানো হলো মামা আম্মু আর ছোট ভাই বসেছে পিছনে। আর আমি ড্রাইভার এর পাশে বসে গুন গুন করে গান গাইছি। গ্রামের সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে কোন সময় বাসায় এসে গেলাম টেরই পাইনি।

মামাদের ফ্যামিলি খুবই বড়।  গ্রামের প্রভাবশালীদের মধ্যে মামা একজন। নানা নানু।২জন খালা,মামার ছেলে মেয়ে ৩জন দুই ছেলে এক মেয়ে। বিয়ে চলছে বাড়িতে তাই সবাইব্যস্ত। শুধু আমার মামাতো ভাই নেহাল ছোট তাই ওর কোনো কাজ নেই। মাঝে মাঝে যদি কেউ দয়া করে কাজ দেয়। আমি ওকে আমার কাছে ডাকলাম বললাম কিরে কেমন আছিস কত হোলো তোকে দেখি না। অনেক বড় হয়েছিস দেখি।তার পর ওকে নিয়ে বাইরে বেরিয়ে এলাম বললাম এতোদিন পর তোদের গ্রামে আসলাম একটু ঘুরতে নিয়ে যাবি না।
নেহাল আমাকে  একটা পুকুর পারে নিয়ে গেলো। জায়গাটা খুব সুন্দর, পুকুরের চারদিকে গাছপালা, হঠাৎ চোখ পরলো আমাদের থেকে একটু দূরে একটি মেয়ে বসে আছে। প্রথম আমি চিনতে পারিনি। একটি কাছে গিয়ে দেখলাম সে আর কেউ না ওইযে হাকালুকি হাওর দেখেছিলাম সেই নিলুফা।তার পাশে একটা বাচ্চাও আছে।

পেছন দাড়িয়ে জিজ্ঞেস করলাম কেমন আছেন। সে একটু গাভরে গিয়ে বললো কে আপনি। আমি কিছুক্ষণের জন্য সক্ট হয়ে গেলাম এতো তারা তারি আমাকে ভুলে গেলো।মাত্র তিন বছর আগেই ওর সাথে কথা হয়ে ছিলো, ওকে খুজে বের করার বাজি ধরেছিলাম।অবশ্য আমি আর খোজ করিনি।

যাইহোক আমি একটু মনখারাপ করে সেখান থেকে চলে এলাম। 
একদিন সকালে বাজার থেকে ফেরার সময় দেখলাম নিলুফার পাশে সেদিন বসে থাকা ছেলেটা স্কুল থেকে ফিরছে।আমি ওকে ডাকলাম। প্রথমটায় ও এলোনা।পরে আমই গেলাম বললাম কেমন আছ।সে একটু কাটা গলায় বললো ভালো আছি। আমি বললাম ওইদিন পুকুর বসে ছিলো সে কিহয় তোমার??
সে বলল ওর আন্টি। তার পর ওকে ছেড়ে দিলাম।

বিকালে রাস্তায় হাঠছি হঠাৎ বাচ্চা ছেলেটা এসে বলল ওর আন্টি বলেছে, কাল সকালে ওর স্কুলের সামনের মাঠে দেখা করতে। আমি শুনে খুব খুশি হয়েছিলাম।আনন্দে আমার নাচতে ইচ্ছে করছিলো।কিন্তু নাচতে পারলামনা কারণ হঠাৎ রাস্তায় নাচানাচি কললে মানুষ পাগল বলে পেদানি দিবে।

পরদিন সকালে আমি স্কুলের ধারে মাঠে গেলাম। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি মাত্র ৯.৩০বাজে,।স্কুল খোলে ১০টায়।  এখন কি করি, উত্তেজিত হয়ে আগে আগে চলে আসছি।কিছু  করার একা একাই ঘাসের উপর বসে ওর কথায় ভাবছিলাম। 
নানাধরণের জল্পনা কল্পনা নিয়ে বসেছি। 

বুঝতেই পারছেন মনের মানুষ দেখা করতে, কি বলতে এটা নিয়ে মনের ভিতর উথাল পাথাল ঢেউ বয়তে থাকে 
স্কুলের ঘণ্টা বেজে গেছে মানে সে এক্ষুনি আসবে। আমি অধির আগ্রহী হয়ে বসে রইলাম মাঠের পাশে। ১১টাবেজে গেলো,১২টাবেজে গেলো। সকাল ঘরিয়ে দুপুর হলো। দুপুর গড়িয়ে বিকালহলো, রাত হয়ে গেলো তবুও আমি তার প্রতিক্ষায় বসে রইলাম। কিন্তু সে এলো না 😷😷😷😥😭।
_ _সমাপ্ত_

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url