ঢাকা চিড়িয়াখানা , মিরপুর, ঢাকা।Dhaka Zoo, Mirpur, Dhaka.

ঢাকা চিড়িয়াখানা , মিরপুর, ঢাকা। Dhaka Zoo, Mirpur, Dhaka.

ঢাকা মিরপুরে অবস্থিত ঢাকা চিড়িয়াখানা আমাদের সকলের পরিচিত একটি নাম।
১৯৬৪ সালে এটির নির্মাণ প্রকল্প শুরু করা হয়। প্রায় দশ বছর পর এটির কাজ সম্পন্ন হয়।১৯৭৪ সালের ২৩রা জুন এটি আনুষ্ঠানিক ভাবে উদ্ভোদন করা হয়। এবং   দর্শকদের জন্য উম্মুক্ত করা হয়।
এটি ছোট বড় সকলের জন্য অন্যতম একটি বিনোদন কেন্দ্র। প্রাকৃতিক ভাবে সাজানো প্রায় একশো সাতাশি একর জমির উপর নির্মাণ করা এই চিড়িয়াখানা মিরপুর চিড়িয়াখানা নামেও পরিচিত।

এই চিড়িয়াখানায় রয়েছে দেশি-বিদেশি সাধারণ ও দুর্লভ প্রজাতির পশু ও পাখি। চিড়িয়াখানায় প্রবেশ করতেই চোখে পরবে বানরের খাঁচা। বানরদের লাফালাফি দুষ্টুমি দিয়েই চিড়িয়াখানার আনন্দ শুরু হয়। বানরের খাঁচার পাশেই রয়েছে চিড়িয়াখানার মানচিত্র। যার মাধ্যমে দর্শনার্থীরা সহজেই জানতে পারেন কোথায় কোন পশু বা পাখি রয়েছে। সকল পশু পাখি দেখার জন্য এই মানচিত্র অনুসরণ করা জরুরি। অন্যথায় আপনি অনেক পশু বা পাখি দেখা থেকে বঞ্চিত হতে পারেন।

এছাড়াও চিড়িয়াখানা প্রবেশ মুখেই রয়েছে একটি তথ্য কেন্দ্র আপনি চাইলে সেখান থেকে একটি নির্দেশিকা বই, ব্রোশিয়ার ইত্যাদি ক্রয় করতে পারেন। চিড়িয়াখানায় পশু বা পাখি দেখা ছাড়াও আপনি নির্দিষ্ট ফি এর বিনিময়ে হাতি এবং  ঘোড়ার পিঠে আরোহন করতে পারবেন।

চিড়িয়াখানার ভিতরে একটি জাদুঘর রয়েছে। এই জাদুঘরে বিভিন্ন প্রজাতির পশু পাখির কঙ্কাল রয়েছে এবং তাদের অঙ্গ প্রতঙ্গ সংরক্ষণ করা হয়েছে। এছাড়াও এখানে বড় বড়  অ্যাকুয়ারিয়াম রয়েছে। যেখানে বিরল প্রজাতির বিদেশি সামুদ্রিক মাছ রাখা হয়েছে।

শীতকালে চিড়িয়াখানার সৌন্দর্য আরো বৃদ্ধি পায়।কারণ চিড়িয়াখানার পশু পাখি ছাড়াও শীতকালে চিড়িয়াখানার বিশাল লেকে অতিথি পাখিদের আগমন ঘটে। যার ফলে দর্শনার্থীরা নতুন নতুন পাখির দেখার তাদার কলকলানি শুনার সুযোগ  পায়।

চিড়িয়াখানার ভিতরে কিছু হারিয়ে গেলে বা পেয়ে থাকলে করনীয়।

চিড়িয়াখানার ভিতরে আপনার কোনো কিছু হারিয়ে গেলে বা আপনি যদি কোনো কিছু পেয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই তথ্য কেন্দ্রে যোগাযোগ করুন। আপনার হারানো জিনিস পেয়েও যেতে পারেন।

চিড়িয়াখানায় যে সকল পশু বা পাখি  রয়েছে।

ঢাকা চিড়িয়াখানার অন্যতম আকর্ষণ হলো রয়েল বেঙ্গল টাইগার ও বনের রাজা সিংহ। এছাড়াও এখানে উল্লেখ্যযোগ্য প্রাণির মধ্যে রয়েছে - ডোরাকাটা হায়েনা, জলহস্তী,  টাপির, চিতাবাঘ,  হরিণ,  হাতি, ওয়াইল্ডবিস্ট, জেব্রা, হনুমান,  বানর, ভাল্লুক,  শিম্পাঞ্জি,  স্কুইরাল, কুমির, অজগর সাপ, উট পাখি, নীল এবং সাদা ময়ুর, রিয়া, রাজ ধনেশ, সারস ক্রেন, গন্ডার, ফ্লেমিংগে, মাছরাঙা, কানিবক ইত্যাদি।

কিছু তথ্য

চিড়িয়াখানায় প্রায় ১৯১ প্রজাতির দেশি-বিদেশি ২১৫০ টি প্রণি রয়েছে।
এবং জাদুঘরে প্রায় ২৪০ প্রজাতির স্টাফিং করা পশু পাখি রয়েছে। এছাড়াও চিড়িয়াখানার ভিতরে রয়েছে জু-অফিস,ভেটেরিনারি হসপিটাল, গবেষণাগার, লাইব্রেরি, একটি শিশু পার্ক এবং  প্রায় ১৩ হেক্টর জায়গা জুড়ে নিরিবিলি নামক দুটি লেক রয়েছে।

সময়সূচি

ঢাকা চিড়িয়াখানা গ্রীষ্মকালীন ( এপ্রিল থেকে অক্টোবর ) সকাল ৯ টা থেকে বিকেল ৬টা পর্যন্ত খোলা থাকে।
এবং  শীতকালীন ( নভেম্বর থেকে মার্চ মাস ) পর্যন্ত সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে।
এছাড়াও সরকারি ছুটিরদিন ছিড়িয়াখানা খোলা থাকে। এবং প্রতি রবিবার চিড়িয়াখানা বন্ধ থাকে। তবে যদি রবিবার সরকারি ছুটিরদিন হয় তাহলে চিড়িয়াখানা খোলা থাকে।

প্রবেশ মূল্য

দুই বছরের উপরে সকলের জন্য প্রবেশ মূল্য ৫০/- টাকা এবং চিড়িয়াখানা জাদুঘরে প্রবেশ মূল্য ১০/- টাকা। এছাড়াও স্কুল, কলেজ, ভার্সিটি স্টুডেন্ট এর জন্য প্রবেশ মূল্য অর্ধেক। সেক্ষেত্রে নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আইডি কার্ড দেখাতে হবে।

পিকনিক স্পট মুল্য

পিকনিকের জন্য উৎসব এবং নিঝুম নামে দুটি স্পট রয়েছ। সারাদিনের জন্য ভাড়া করতে খরচ হবে যথাক্রমে ১০,০০০/- ও ৬,০০০/- টাকা।

পার্কিং ফি

চিড়িয়াখানার ভিতরে বাস,ট্রাক,মিনিবাস এধরণের যানবাহনের জন্য পার্কিং ফি ৪০/- টাকা। মাইক্রো বাস,ট্যাক্সি,জীপ,প্রাইভেট কার এই ধরনের গাড়ির জন্য পার্কিং ফি ২০/- টাকা। সিএনজি, টেম্পু,মোটরসাইকেল, ইত্যাদি পার্কিং ফি ১০/- টাকা। এবং  রিক্সা, বাইসাইকেল ইত্যাদির জন্য পার্কিং ফি ২/- টাকা।

কিভাবে যাবেন

ঢাকার গুলিস্তান থেকে চিড়িয়াখানার উদ্দেশ্যে সারাদিন বাস পাওয়া যায়। এছাড়াও নিজস্ব গাড়িতে কিংবা সিএনজি, ট্যাক্সি ভাড়া করে যেতে পারেন।

খাবার দাবার

চিড়িয়াখানার সামনে অনেক গুলো খাবারের দোকান রয়েছে। তবে খাবর খাওয়ার আগে খাবার দাম জেনে নিন। আমার মতে আপনি চিড়িয়াখানা একটু দুর থেকে খাবার কিনুন। কেননা চিড়িয়াখানার সামনে খাবারের দাম অনেক বেশি।

আশেপাশে দর্শনীয় স্থান

বুটানিক্যাল গার্ডেন

মিরপুর চিড়িয়াখানার পূর্ব দিকে শিক্ষার্থীদের গভেষনা সহায়তা ও শিক্ষা দেনের জন্য এবং দুশনমুক্ত পরিবেশ গড়ার উদ্দেশ্যে ১৯৬১ সালে প্রায় ২০৫ একর জায়গা নিয়ে এই গার্ডেন তৈরী করা হয়। চিড়িয়াখানা ও বোটানিক্যাল গার্ডেন কাছাকাছি হওয়ায় আপনি চাইলে দুটো একসাথে ঘুরে আসতে পারবেন।

এই কোলাহল পুর্ণ শহর যেখানে সমস্ত শহর খুজেও প্রকৃতি খুজে পাওয়া যায় না সেই শহরের বুকে গড়ে তোলা এই প্রাকৃতিক ছায়ায় ঘেরা গার্ডেন। এখানে রয়েছে  প্রায় ৮০০ জাতের বৃক্ষরাজি। এই বৃক্ষরাজির মধ্যে রয়েছে নানা ধরনের ফুল,  ফল, ও ঔষধি গাছ। এছাড়াও রয়েছে পুকুর ও দিঘি।

গার্ডেনের সময়সূচি

মার্চ মাস থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত প্রতি দিন সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে।
এবং ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত প্রতিদিন  সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৪ঃ৩০ পর্যন্ত খোলা থাকে।

প্রবেশ মূল্য

বড়দের জন্য প্রবেশ মূল্য জনপ্রতি ১০/- টাকা এবং ছোটো দের জন্য জনপ্রতি ০৫/- টাকা।
শিক্ষা সফরে আসা শিক্ষার্থীদের জন্য জনপ্রতি প্রবেশ মূল্য ০৩/- টাকা।

সতর্কতা

বোটানিক্যাল গার্ডেনে অনেক হকার এবং প্রতারক ঘোরাঘুরি করে। তাই এখানে কোনো হকার থেকে কিছু না খাওয়াই ভালো। বিশেষ করে টিনএজার ছেলে মেয়ে দেখলে তারা বেশি উত্ত্যক্ত করে। এছাড়া গার্ডেনের সামনে ফাস্ট ফুট থেকেও কিছু খাবেন না এরা খাবারের দাম অনেক বেশি রাখে।

"আপনার ভ্রমণ শুভ হোক "



Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url